রহস্য

মো.ওসমান ফারুক অরভি

ছোটবেলার থেকেই আমার ভ্রমণ ভীষণ পছন্দ।তাই যখন তখন বের হয়ে যাই গাড়ি নিয়ে।একদিন গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর নগরী সিলেটে।সিলেটের মনোরম সৌন্দর্য আমাকে মোহিত করতে বেশি সময় নিল না।সারাদিন সিলেট ঘুরে রাতে ঢাকা ফিরে আসার জন্য রওনা দিলাম।রাত বললে ভুল হবে আসলে রওনা দিতে দিতে মধ্যরাতই হয়ে গেল।

রাস্তায় এক হোটেলে একটু ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবারণ করে নিলাম।সেখানে এক লোকের সাথে আমার দেখা হলো।লোকটা নাকি বাসে করে সিলেট থেকে ঢাকা যাচ্ছিল।মাঝপথে তার ওয়ালেট চুরি হয়ে যায়।এখন সে অসহায় হয়ে আমাকে তাকে ঢাকা পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।তাই তাকে নিয়েই আমি আমার যাত্রা পুনরায় শুরু করলাম।

হোটেল থেকে কিছু দূর যেতেই হঠাৎ করে আমার গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।আমি গাড়ির কি হয়েছে তা দেখতে গাড়ি হতে বের হই।গাড়িতে আবার ঢুকলে আমি দেখি যে লোকটা গাড়িতে নেই।রাস্তার চারদিকে স্তব্ধতা।এই জনমানবহীন রাস্তায় লোকটি কোথায় চলে গেল তা কিছুতেই বুঝতে পারছি না।রাস্তার পাশের ঝোপঝাড় থেকে নানা প্রকারের শব্দ ভেসে আসছে।আমি কিছুক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করে আবার আমার যাত্রা শুরু করি।

আমি বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ গাড়ি চালানোর পর একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম যে আমি বার বার সেই রাস্তাতেই ফিরে আসছি যেখানে আমার গাড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।আমার সমস্ত শরীর ঘামতে শুরু করলো।অকস্মাৎ ভাবে লোকটা আমার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।আমি গাড়ি থামিয়ে তার কাছে গেলাম।তবে লোকটা আমার সাথে কোনো কথা না বলেই গাড়ির ভিতর বসে পড়লো।লোকটার চোখে আমি এক অদ্ভূত আলো দেখতে পেলাম।তার দৃষ্টি নড়ছে না।সে গাড়িতে স্থির হয়ে বসে আছে।আমি তার সাথে বার বার কথা বলার চেষ্টা করলেও তার ওই অদ্ভূত চোখের দিকে তাকিয়ে আমি কিছু বলারই সাহস পেলাম না।

গাড়ি চালিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করে আমার গাড়ির সাথে কিছু একটার ধাক্কা লাগে।কিন্তু কিসের তা আমার ধারণার বাইরে।আমি গাড়ি হতে নেমে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমার মানসিক প্রস্তুতি ছিল না।আমার গাড়িতে টাটকা রক্ত লেগে আছে।কিন্তু রাস্তায় বা আশে পাশে কোথাও কিছু নেই।আমার মনে ভয়ের দালানের উচ্চতা বাড়তেই থাকে।আমার ভাবনা যখন এই রক্তের রহস্যের মধ্যে আবদ্ধ ঠিক তিখন লোকটা আমার কাধে হাত দেয়।লোকটার চেহারা রক্তে মাখানো।তার চোখ থেকে অশ্রুর মতো করে রক্ত ঝড়ছে।তার দেহ থেকে মৃত দেহের গন্ধ ভেসে আসছে।তার হাত আমার কাছে ভীষণ ভারী লাগে।এতই ভারী যে আমার কাধ যেন ভেঙে পড়ে যাচ্ছে।আমি সেখান থেকে এক দৌঁড় দেই।এই পরিস্থিতি সামলানোর সাহস আমার মাঝে ছিল না।আমি আমার প্রাণ বাঁচাতে যত দ্রুত সম্ভব সেই গতিতে দৌঁড় দেই।

আমার পা আর চলছে না।জানি না কতক্ষণ যাবৎ দৌঁড়াচ্ছি।তবে আমি যে তার থেকে কমপক্ষে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে চলে আসছি তা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।যদিও আমার মতে আমি তার থেকে অনেক দূরে এসে পড়েছি তবু আমি তাকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি।সে আমার দিকে তাকিয়ে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো।তার রক্তাক্ত চেহারা ও হিংস্র দাঁত দেখে তাকে শয়তানের মতো মনে হলো আমার।আমার পায়ে আর শক্তি নেই যে আমি দৌঁড়াবো।লোকটা আমার একদম কাছে এসে পড়লো।ভয়ে আমি আর সজ্ঞান থাকতে পারলাম না।আমি আমার জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।

আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি যে আমি আমার বাসায় শুয়ে আছি।আমার পাশে আমার পরিবারের সবাই বসে আছে।আমাকে নাকি তারা রাস্তায় অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছে।আমি তাদের কিছুই বলতে পারলাম না।ওইদিন আমার সাথে কি হলো তা আমার জীবনের হয়তো বা সবচেয়ে বড় রহস্য।ওইদিনের ঘটনা হয়তো আমি আমার কল্পনা ভাবতে পারতাম।কিন্তু আমার ওই গাড়িটি আর কখনোই চালু হলো না।