ঈদ বোনাস

মো.ওসমান ফারুক অরভি

এখনও ঈদের বোনাসটা পাওয়া হলো না।প্রতিবছর ২৪-২৫ রোজার মধ্যেই ঈদের বোনাসটা পাওয়া হয়ে যায়।এবার ভাবছি বেশি কিছু কিনবো না।যদিও প্রতিবারই ভাবি এটা।কিন্তু মার্কেটে গেলে ঈদের বোনাস পুরাটা শেষ করেই ফেলি।আবার যাকাতের টাকাটাও হিসাব করতে হবে।যদিও বেশি টাকা নেই ব্যাংকে তবুও প্রতিবার টাকাটা হিসাব করে দিয়ে দেই গরিব মানুষদের।

আজ ২৭তম রোজা।শেষ কর্মদিবসে ঈদ বোনাসটা পেয়েই গেলাম।রাস্তায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ আমার চোখ গেল একটা বছর ৮-৯ এর একটা ছেলের উপর।পরনে তার ছিড়া ও ময়লা কাপড়।কিন্তু চেহারায় কেমন জানি একটা মায়াবি ভাব।কেন জানি ছেলেটার থেকে চোখ সরছেই না।আমি ছেলেটার কাছে গেলাম।

ছেলেটার নাম আবির।করাইল বস্তিতে সে ও তার মা কোনোভাবে তাদের জীবন কাটাচ্ছে।আবিরের বাবা করোনায় মারা গিয়েছে আরো তিন বছর আগে।ভিক্ষা করেই তার অন্ন জুটে।কখনো অনাহারে কেটে যায় সারাটা দিন।তার এসব কথা শুনে কেন জানি চোখে পানি এসে গেল।কেন জানি নিজেকে অপরাধী মনে হলো।আমাদের সংবিধানে মানুষের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের বলা হলেও বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ কতটুকু?

আবিরকে নিয়ে চলে গেলাম একটা শপিংমলে।ওকে বললাম, "তোমার যা যা পছন্দ হয় আমাকে বলবা।" সে শুধু মাথা নাড়ল।এরকম পরিস্থিতিতে কখনো পড়েনি সে।তাই কি বলতে হবে তাও সে জানে না।কিন্তু ওর চোখ যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে তা আমি স্পষ্ট দেখছি।আমি জানি ওর মনে আনন্দের কোনো সীমা নেই।ওর মন চাচ্ছে অনেক কিছু কিনতে।কিন্তু আধা ঘন্টা হয়ে গেল আবির কিছুই বলছে না।হয়তো লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না।আমি হাটু গেড়ে ওর সামনে বসলাম। "দেখ,আমি তো তোমার বাবার মতোই,তাই না?তোমার বাবা যদি তোমাকে এখানে নিয়ে আসতো তাহলে কি তুমি লজ্জা পেতে?" আবির মুচকি হাসি দিয়ে এক দৌঁড় দিয়ে চলে গেল তার পছন্দের কাপড়ের কাছে।আজ ওকে কেউ ওর সখের কাপড় থেকে দূরে রাখতে পারবে না।

আসলে ঈদ মানে তো আনন্দ।আনন্দ তো সবার।শুধু যাদের টাকা আছে তারাই আনন্দ করবে আর যাদের টাকা নেই তারা কি আনন্দ করবে না?আমাদের ধর্মতো এমনটা নয়।এইযে যাকাতের কথাই ধরি।যাকাত তো এজন্যই দেওয়া হয় যেন গরিব মানুষগুলোও আনন্দ উপভোগ করতে পারে।এছাড়াও ফিতরা ও সাধ্যমতো দান-খয়রাত তো আছেই।কিন্তু আমরা খালি টাকা কামাতে চাই।আমাদের বাড়ির পাশে কেউ খেয়ে আছে নাকি না খেয়ে আছে তা আমাদের ভাবার সময় নেই।আমরা শুধু আমাদের নিয়েই ব্যস্ত।প্রতি ঈদে আমাদের লাগবে নতুন কাপড়,নতুন জুতা আরো কতো কি!এমনও রয়েছে যে একজনের পাঞ্জাবি কেনার টাকা দিয়ে একটা পরিবার সারা মাস চলতে পারে।কিন্তু আসলে আমাদের কি এগুলোর প্রয়োজন সত্যিই রয়েছে?

"আঙ্কেল,এইযে এইগুলা আমার পছন্দ।বেশি হয়নি তো?" "একদমই না।চলো তোমার মায়ের জন্য কিনাকাটা করে নেই।"

আবির,তার মা ও তার কিছু বন্ধুর জন্য কেনাকাটা করে দিলাম।সাথে কিছু খাবারও কিনে দিলাম।ঈদ বোনাস পুরোটাই শেষ হয়ে গেল।কিন্তু আমার মনে কোনো আক্ষেপ নেই।কারণ আমি জানি এই ঈদে আবির হাসবে।ওকে পুরোনো জামা দিয়ে ঈদ করতে হবে না এবার।আমি কারো খুশির কারণ হতে পারছি এটা ভেবেই আমি খুশি।সমাজের সবাই যদি এভাবে ভাবতো তাহলে হয়তো ঈদে সবার খুশি হতে পারতো।আর আমি বদলালে তবেই তো বদলাবে সমাজ।কিন্তু একটা প্রশ্ন রয়েই যায়,এটা কি যথেষ্ট?