আগামীকাল আমার এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে।আমি কখনোই পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে বেশি একটা ভাবি না।কিন্তু এই রেজাল্ট নিয়ে ভাবতেই হচ্ছে।কারণটা হয়ত সবারই জানা।যাদের জানা নয় তারা হয়ত কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনে যাবে।সময়ের ঘড়ির কাঁটা যত এগোচ্ছে ততই যেন বুকের মধ্যকার লাল মাংসপিন্ডটা ভারি হয়ে যাচ্ছে।
এই পরীক্ষার সময় নিজেকে সেলিব্রিটি থেকে কিছুটা কম মনে হয়নি।মা আমাকে ঘরের কোনো কাজ তো দূরের কথা নিজের কাপড় পর্যন্ত ধুতে দিল না।সময় মতো খাবার সময় মতো ঘুম আরো কতো কি!কিন্তু এসবে আমার কতটুকু উপকার হয়েছে তা জানেন?উপকার হয়েছে যেই আমি কখনো পরীক্ষার রেজাল্টের টেনশন করিনি সে এখন নিদ্রাবিহীন রাত কাটাচ্ছে।এই বিশেষ আদর ও সেবার জন্য অনেকেই নার্ভাস হয়ে যায়।
রেজাল্টের দিন আমার মনের আশা পূরণ হলো না।কিছু দিনের ব্যবধানে নিজেকে সেলিব্রিটি থেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো।সব বদলে গেল শুধুমাত্র একটি দিনের ব্যবধানে।সবাই মুখ ফিরিয়ে নিল শুধুমাত্র একটা কাগজের টুকরার জন্যে।আমি ভাবতে লাগলাম যে আমি কি পুরোটা বদলে যাব?কিন্তু আমি যদি বাকি সবার মতো করেই আবার সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে দেই তাহলে কি থাকবে আমার কাছে?
আসলে ভাবনার জগতের যে সাদা ক্যানভাস রয়েছে সেই ক্যানভাস যেকোনো রং দিয়েই রাঙানো যায়।কিন্তু বাস্তব জগতের যে ক্যানভাস আছে সেই ক্যানভাসে ইচ্ছা মতো কোনো রং দেওয়া যায় না।বাস্তব জীবনে প্রতিটা রঙের জন্য রয়েছে নতুন নতুন সংগ্রাম।রং যতোটা সুন্দর হবে কষ্ট হবে ততোটা তীব্র।ক্যানভাস যতো বড়ো হবে সংগ্রাম হবে ততোটাই নিষ্ঠুর।
এরকম পরিস্থিতিতে অনেকেই নিজেকে বদলে ফেলে।পরবর্তী মহাযুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগে।কিন্তু যুদ্ধটা আসলে কিসের?সবার মনে হয় যুদ্ধটা আসলে মেধাবী হওয়ার।কিন্তু আসলে যুদ্ধটা হলো নিজের মেধাকে ধ্বংস করার।এই যুদ্ধ শেষে যদি মগজ বের করা হতো তাহলে দেখা যেত যে সেটা পচে গেছে।আমার মন কিছুতেই এই যুদ্ধে যোগ দিতে চায় না।সবাই চেয়েছে আমি যেন সব কিছু ফেলে রেখে আমার পরবর্তী দুই বছর শুধু পড়ালেখাই করি।তবে আমি এমনটা নয়।মানুষ যখন নিজের জীবন শুধুমাত্র একটা জিনিসের প্রতি নিবেদিত করে ফেলে তখন মানুষটা হয়ে যায় নির্জীব ও প্রাণহীন।
১০ বছর পর আজ আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা হলো।সে আমাদের স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিল।সে এখন বিসিএস ক্যাডার।মাসে নাকি ৫০ হাজার টাকা বেতন।নিজের ফ্ল্যাটও নাকি আছে।আর আমি ব্যর্থ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি তাই ভাবছেন তো তাই না?না আমি ব্যর্থ হইনি।আমার আজ নিজের ব্যবসা আছে।কারো সাহায্য ছাড়া নিজের গড়া ব্যবসা।মাসে যত টাকা আয় হোক না কেন দিনশেষে আমি বলতে পারবো যে আমি নিজের জন্য কিছু করছি।বুড়ো বয়সে যখন বিছানায় পড়ে থাকবো তখন নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে না যে আমি জীবনে কি করলাম?
পরীক্ষার রেজাল্ট কখনো কারো মেধা যাচাই করতে পারে না।আমি জীবনে সফল হবো নাকি ব্যর্থ তা একটা পরীক্ষা কীভাবে যাচাই করবে?আর আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু নামের সৃজনশীল।সৃষ্টিশীল কোনো কিছুই নেই এই শিক্ষা ব্যবস্থায়।আর এই পরীক্ষার রেজাল্টের জন্যই কতো জন নিজের প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নেয়।কিন্তু দিনশেষে একটা প্রশ্ন রয়েই যায় "রেজাল্ট খারাপ হলেই কি সব শেষ?"